দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য। সর্পের মস্তকে মণি থাকিলেও তাহা কি ভয়ংকর নহে?

ভাবসম্প্রসারণ: বিধান ব্যক্তি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও অনুসরণীয়; কারণ একজন বিদ্বান ব্যক্তি বিদ্যা ও জ্ঞানের প্রভাবে সচ্চরিত্রবান হয়ে ওঠেন। বিদ্যার প্রভায় তিনি নিজে আলোকিত হন, সমাজকে আলোকিত করেন; জ্ঞানে অচি-স্নাত হয়ে নিজে শুদ্ধ হন, সমাজকে দেখান শুদ্ধতার পথ। তবে বিদ্যা অর্জন করেও যদি কোনো মানুষ চেতনাগতভাবে অসচ্চরিত্রের হন, তাহলে তাকে ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করাই সমুচিত। বিদ্যা মানুষের পরম ধন। বিদ্যা মানুষের মধ্যে বিবিধ মানবীয় গুণাবলির সমাবেশ ঘটায়, মানুষকে শুভবোধে উদ্দীপ্ত করে, মানুষকে কল্যাণব্রতে অনুপ্রাণিত করে। অর্থাৎ, এককথায় বিদ্যা মানুষকে সাচ্চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলে। একজন বিধান ব্যক্তি সত্য ও কল্যাণের প্রতি হবেন গভীর অনুরাগী। লোভ-হিংসার উর্ধ্বে উঠে নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করবেন শুদ্ধচিত্তের মানুষ হিসেবে। ন্যায়পরায়ণতা ও সত্যনিষ্ঠায় তিনি হবেন সমাজের পথিকৃৎ। একজন বিদ্বান ব্যক্তির কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে বিচ্ছুরিত হবে পবিত্রতার ন্যুতি। তিনি তাঁর লব্ধ জ্ঞানকে সমাজের উন্নতি ও সমৃদ্ধির কাজে প্রয়োগ করেন, তাঁরদ্বারা সমাজের অশেষ কল্যাণ সাধিত হয়। মহানবী (স)-এর প্রতি পবিত্র কোরানের প্রথম বাণীই ছিল 'ইকরা' অর্থাৎ পড়ো। ইসলামে বিদ্যার্জনকে নর-নারীর জন্য ফরজ ঘোষণা করা হয়েছে এবং মহানবী (স) বিধানের মর্যাদা নির্দেশ করতে গিয়ে বিষানের কলমের কালিকে শহিদের রক্তের চেয়েও পবিত্র বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও বাস্তব যে, সমাজে এমন কিছু বিছান লোক দেখা যায়, যারা শিক্ষিত হলেও বিদ্যা তাদের চরিত্র গঠনে কোনো প্রভাব রাখতে পারেনি। বিদ্যার বদৌলতে কিছু কিছু বিষয়ে তাদের কর্ম-লক্ষতা বৃদ্ধি পেলেও তাদের চেতনাগত দিকের কোনো উৎকর্ষ সাধন হয়নি। শিক্ষাহীন, অসচেতন মানুষের মতো লোভ, হিংসা, স্বার্থান্ধতা এসব পশুপ্রবৃত্তি তাদের মজার গভীরে রয়েই গেল। উপরন্ত শিক্ষার সংশ্লেষে তাদের প্রবৃত্তি দুর্দমনীয় ও অধিকতর ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। মানুষের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ বিন্দুমাত্র নেই, মানুষকে পদদলিত করার এক হিলে ক্রোধ তাদের সার্বিক আচরণে ফুটে ওঠে। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার প্রয়োজনে দুজন বিষানেরা তাদের বিদ্যার অপব্যবহার করে থাকে, যা সমাজের জন্য অধিকতর ক্ষতিকর। শিক্ষাবঞ্চিত মানুষেরা সমাজের জন্য কোনো বৃহত্তর কল্যাণ করতে অক্ষম; কিন্তু দুর্জন বিদ্বান সমাজের জন্য এক ভয়ঙ্কর দুষ্টক্ষত। সমাজের অনিষ্ট করার ক্ষমতা তাদের অশিক্ষিত মানুষদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। চরিত্রহীন বিধান তার বিদ্যাকে অন্যায় কাজে ব্যবহার করে। তাই বিদ্বান ব্যক্তি শ্রদ্ধাভাজন হলেও চরিত্রহীন, দুষ্টবুদ্ধিসম্পন্ন বিধান কোনোভাবেই সম্মান লাভের যোগ্য নয়। লোকমুখে প্রচলিত আছে কোন কোন বিষধর সাপের মাথায় অতিমূল্যবান মণি থাকার কথা। জীবনঘাতী বিষের জন্যই সাপের মাথার মণি মহামূল্যবান হলেও কার্যত মূল্যহীন। অনুরূপভাবে বিদ্যা যত মূল্যবানই হোক দুর্জনের বিদ্যা কোনো মূল্য বহন করে না, তার সাহচর্য কোনো অবস্থাতেই শুভ নয়। এধরনের লোকের সাহচর্যে নিষ্কলুষ চরিত্রও কলুষিত হতে পারে। বিদ্যার চেয়ে চরিত্র অধিকতর মূল্যবান; চারিত্রিক শুদ্ধতা রক্ষার জন্যই দুর্জন বিদ্বানের সাহচর্য সর্বদাই পরিত্যাজ্য।