স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।

ভাব-সম্প্রসারণ: মানব জীবনের সর্বাধিক কাঙ্ক্ষিত বস্তু স্বাধীনতা – সেটা হোক ব্যক্তিগত, হোক রাষ্ট্রীয়। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা ছাড়া ব্যক্তিগত স্বাধীনতা কল্পনাও করা যায় না। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা অর্জন করা খুবই কষ্টসাধ্য। এর জন্য বহু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, করাতে হয় বহু ভাজা প্রাণের রক্ত। শক্তিপ্রমত্ত আগ্রাসী শক্তি কথনো পদানত জাতিকে স্বাধীনতা নিতে চায় না, বহু আত্মত্যাগের রক্তাক্ষরে লিখে নিতে হয় স্বাধীনতার সনদ। পরাধীনতা কোনো জাতির জন্য এক ভয়াবহ অভিশাপ। রুদ্ধ কারাগারে অবরুদ্ধ মানুষের মাথা ঠুকে মরার এক করুণ যন্ত্রণা এই পরাধীনতার মধ্যে নিহিত। পরাধীনতা নিজগৃহে অন্যের দাসত্ব করার আত্মিক রক্তক্ষরণে একটি জাতিসত্তার মৃত্যু ঘটায়। নিজের মতো করে প্রাণের প্রাচুর্যে বাঁচার জন্য স্বাধীনতা এক পরম ধন। বহু মানুষের আত্মত্যাগের সীমাহীন মূল্যে দুর্বৃত্তের হাত থেকে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা যায়; কিন্তু স্বাধীনতাটিকে রক্ষা করার জন্য আরো কঠিন সাধনার প্রয়োজন হয়। কারণ স্বাধীন দেশের ভেতরে বাইরে সক্রিয় থাকে অসংখ্য প্রকাশ্য ও গুপ্ত শত্রু, আগ্রাসী শত্রু ফিরে পেতে চায় হারানো উপনিবেশের ওপর পুরনো কর্তৃক। তারা দেশের স্বাধীনতা হরণে প্রতিনিয়ত বিচিত্র ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারে তৎপর থাকে। তাই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রয়োজন জনগণের সম্মিলিত সচেতনতা ও স্বাধীনতার প্রতি মর্যাদাবোধ। একটি দেশের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করতে হলে ঐ দেশের জনগণের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটানো অনিবার্য। দেশকে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দেশের আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড যদি মজবুত হয় এবং জনগণকে নিরক্ষরতামুক্ত করা সম্ভব হয়, তবেই জনসাধারণের মধ্যে স্বাধীনতার স্পৃহা দৃঢ়বদ্ধ হবে এবং দেশের অর্জিত স্বাধীনতা আর কখনো বিপন্ন হবে না। সকল নাগরিকের মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থের উদেশাত্মবোধের বিকাশ ঘটাতে হবে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সাংস্কৃতিক জাগরণের মধ্য দিয়ে জনগণকে স্বাধীনতার অতন্দ্র গ্রহরীতে পরিণত করা সম্ভব হলেই দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত হবে।