স্বদেশের উপকারে নাই যার মন, বলে মানুষ তারে; পশু সেইজন।

ভাবসম্প্রসারণ: মানুষের মহৎ গুণাবলির মধ্যে অন্যতম হলো স্বদেশপ্রেম। জন্মভূমিকে ভালবেসে তার কল্যাণ-চোষ্টায় নিজেকে নিবেদন করার মধ্যেই একজন মানুষের দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। দেশপ্রেম যার মধ্যে নেই মানুষ হিসেবে সে ঘূর্ণিত ও নিন্দিত। জন্মভূমি মায়ের মতোই একান্ত আপনার ধন। প্রতিটি মানুষের অস্তিত্বের বুনিয়াদ নির্মিত হয় জন্মভূমির কোলে। মায়ের দুগ্ধ পান করে যেমন শিশু পুষ্ট হয়, মায়ের পরম স্নেহ গায়ে মেখে শিশু বেড়ে ওঠে, তেমনি জন্মভূমির রস অনুপান করে, ধুলোবালি, আলো-বাতাস গায়ে মেখে একজন মানুষ পরিপুষ্ট ও বিকশিত হয়। তার অস্তিত্বের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে জন্মভূমির বিচিত্র উপাদান। জন্মভূমির সঙ্গে তৈরি হয় আত্মার বন্ধন। তাই জন্মভূমির প্রতি মানুষের থাকে এক সহজাত অনুরাগ। স্বদেশকে ভালবাসা মানুষের এক পবিত্র কর্ম হিসেবে পরিগণিত। স্বদেশ যেমন পরম মমতায় কোল জুড়ে তার সন্তানদের আশ্রয় নেয়, সন্তানদেরও স্বদেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা পোষণ করা এক বিশেষ কর্তব্য। মা যত দরিদ্রই হোক একজন সন্তানের জন্য মায়ের যেমন কোনো বিকল্প নেই, ঠিক তেমনি নিজের দেশ যত ক্ষুদ্র, দরিদ্রই হোক না কেন, জন্মভূমির চেয়ে সেরা কোন দেশই নয়। একজন দেশপ্রেমিক মানুষের মধ্যে থাকে দেশের জন্য সর্বস্ব উজাড় করা ভালবাসা, দেশের সম্পদে-বিপদে সবসময় স্বদেশ-লগ্ন থাকার এক অকৃত্রিম অনুভূতি। একজন দেশপ্রেমিক লোকের কাছে স্বদেশ হলো— 'জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী।' দেশপ্রেমিক ব্যক্তি স্বদেশের কল্যাণ ভিন্ন অন্য কিছু ভাবতে পারে না। দেশ ও জাতির উপকার করতে পারলেই নিজের জীবনকে সার্থক মনে করে। মাতৃভূমি মানুষের কাছে এত প্রিয় যে, দেশের বিপদে মানুষ নিজের জীবন দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও দেশে এমন কিছু মানুষ থাকে, যারা দেশের সঙ্গে কোনো বন্ধন অনুভব করে না, দেশের প্রতি থাকে না তাদের কোনো দায়িত্ববোধ, দেশের কল্যাণে তাদের কোনো অবদান থাকে না, বরং দেশকে ব্যবহার করে নিজের নোংরা স্বার্থে, এমনকি নিজের স্বার্থের জন্য নিজের দেশকে বিকিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। এরা মানুষ হিসেবে অধম, পশুকূল্য। দেশপ্রেমহীন এই নরাধমেরা যতই গুণবান, জ্ঞানী ও সম্পদশালী হোক না কেন তারা বর্জ্যারূপে পরিত্যাজ্য। দেশপ্রেমেই মানুষের মহত্ত্বের পরিচয়, দেশের প্রতিটি মানুষেরই উচিত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া।